গাড়ি তে ব্যাগ তোলা হয়ে গেলে দ্রুত মা বাবা কে প্রণাম সাড়ে ছেলেট। প্রতি বার যাওয়ার সময় খুব তাড়াহুড়ো করে এই সময়টা। মা আসি, বাবা আসি এই চলো চলো, গাড়ি তে ওঠো, এলাম এলাম বলে দ্রুত গাড়িতে উঠে এয়ারপোর্ট রওয়ানা দে। তাড়াহুড়োয় মা বাবার চোখে জল আসার সুযোগ পায় না। হয়তো এই চোখের জলে বিদায় এড়ানোর জন্যই এই তাড়াহুড়ো।
ছেলেটির বাবা প্রতিবার জিগেস করে - এয়ারপোর্ট ছাড়তে যাবো? যখন প্রথম ঘর ছেড়েছিলো, তখন স্টেশন ও ছাড়তে যেতে চেয়েছিল। ছেলেটা না করে। "কি করবে এতো দূর গিয়ে? কোনো দরকার নেই", রুক্ষ ভাবেই বলে। এই রুক্ষতা ছেলেটির বাবা মায়ের অভ্যেস হয়ে গেছে। এক ই উত্তর প্রতিবার, এক ই রুক্ষতা, তাও জিজ্ঞেস কর। হয়তো বোঝে যে বিদায় বেলায় বাবা মা এর চোখের জল দেখে গেলে বাইরে মন টিকবে না। কেই বা সাধ করে ঘর ছেড়ে, শহর ছেড়ে, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ছেড়ে দূর দেশে পারি দেয় !
আমি কলকাতার কোনো এক লেনিন সারণির প্রান্তিক কোনো এক গলি - যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক বাড়ির এক ছেলে এক মেয়ে কে বিদেশ পারি দিতে দেখল। হৈহুল্লোরে গম গম করা বাড়ি - শান্ত, নিঝঝুম হতে দেখল। মেয়েটির যাওয়ার পর তার মা বাবা কে বাক শূন্য হয়ে চোখের জল আটকাতে আটকাতে ঘরের মধ্যে ঢুকে যেতে দেখল। ছেলেটির যাওয়ার পর তার মা বাবা কেও এক ই ভাবে শান্ত ধীর পায়ে রোজ নামছে ফিরতে দেখলো। ছেলে মেয়ের ছেড়ে যাওয়া অগোছালো ঘর, ভুল করে ছড়িয়ে রাখা জামা কাপড়, বাচ্চা দের ছড়িয়ে থাকা খেলনা,দেওয়াল ই পেন্সিল এর আঁকিবুকি, যা দেখে দু দিন আগেও রাগ হয়েছিল, তা দেখে চোখে জল এলো তাদের। বৃদ্ধ বাবা মে দের নিঃসঙ্গতা দেখি রোজ। আমার মতো গান্ধী সারণি, নেতাজি সারণি, নেহেরু সারণি আরো অনেক সারণি - সবাই এক ই ছবি দেখে রো। ছেলে মেয়ে গুলো বাড়ি এলে, সেটাই হয়ে ওঠে দূর্গা পুজো, কালী পুজো, লক্ষী বা সরস্বতী পুজোর মতো উৎসব। হৈ হৈ করে চোখের নিমেষে কেটে যায় দিন।
আবার শুরু অপেক্ষা।